up

#কিংবদন্তির ভাওয়ালে একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস(ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা)



কভিড জনিত কারনে লম্বা সময় ধরে নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি মেনে চলতে চলতে খুব হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। দমবন্ধকর এই অনুভূতি থেকে বের হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেই এই যাত্রা।বিধি নিষেধের কারনে দেশের বাহিরে যাওয়া যাচ্ছে না,আবার দেশের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো এতটা কোলাহলপূর্ণ যাওয়ার ইচ্ছে বা সাহস কোনটাই পেলাম না।তাই আমরা ছায়াঘেরা নীরব, নিস্তব্ধএবং কোলাহল মুক্ত ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা রিসোর্টটিকে গন্তব্য নির্ধারণ করলাম।






শালবনের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা রিসোর্টটি।এমন সুনসান পরিবেশের নীরবতার ধ্যান ভেঙে দেয় পাখির ডাক। চারপাশ উঁচু উঁচু গাছ পালা দিয়ে ঘেরা নয়নাভিরাম এই রিসোর্টের প্রধান ফটকের নান্দনিক কারুকার্য দেখলেই যে কোনো দর্শনার্থীর মনে উৎসুক অনুভূতি জাগাবে।যেমনটা আমারও হয়েছে।আমাদের গাড়ীটা যখন অভ্যার্থনা বিল্ডিং এর সামনে থামলো তখন মনে হল নেপাল বা ভুটানের কোন স্থাপনার সামনে এসেছি।বিল্ডিংটার স্থাপত্যশৈলী নেপাল বা ভুটানের আদলে তৈরি।যদিও আমি কোন স্থাপত্যবিদ নই,সাধারণ চোখে আমার এমন মনে হল।ভিতরটাও বেশ পরিপাটী করে গোছানো।যাতে জমিদারি আভিজাত্যের ছোঁয়া আছে।দর্শনার্থীদের বসার জন্য দোলনা পালঙ্ক, এন্টিকগাড়ী,এন্টিক বাতি সহ ছোট ছোট পুরানো আমলের জিনিশ দিয়ে সাজানো।পরিবেশটা যেন ভাওয়ালের রাজবাড়ীর রাজকীয় আবেশ নিয়ে আসে।সেই ভাবনাকে আরো উৎসাহিত করে দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শিত ভাওয়ালের রাজপরিবারের তথ্যচিত্র।







চেকইন টাইম 2টায় হওয়ায় আমরা ক্যাফে কর্নারে গিয়ে বসলাম।বেশ চড়া দামে মধ্য মানের কফি হলেও চাইনিজ বাঁশঝাড়ে ঘেরা কফি কর্নারটা কিন্তু বেশ।



প্রায় ৬৫ একর জায়গার উপর নান্দনিক এই রিসোর্টটি অবস্থিত।এই রিসোর্টটিতে রয়েছে ৫ টি জোন ও ৬১ টি কটেজ। পুরো রিসোর্টটি গাছ আর আউট ডোর ফার্নিচার দিয়ে সাজানো।ছবি তোলার জন্য রিসোর্টটি এক কথায় অসাধারণ! এছাড়া,একেকটি কটেজ একেক নকশায় তৈরি।কটেজ গুলো সাজানো হয়েছে গাছপালা দিয়ে,সবখানে সবুজ আর সবুজ।দুইটা রুম,দুইটা বাথরুম আর একটা লিভিং রুম নিয়ে একটা কটেজ।প্রতিটি কটেজের তিন দিকে খোলা করিডোর।অনেকটা উঠানের মত।বসার জন্যকাঠের সিঁড়ি ও বেন্চ বসানো ছিল।আমার কটেজে বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল,আমাকে সঙ্গ দিতে একটা বিড়াল পরিবার।চঞ্চল দুটো বিড়াল বাচ্চার মিষ্টি দুষ্টুমি দেখতে দেখতে আমার বই পড়া লাটে উঠেছে।নইলে এমন আয়েশি অবকাশে আমার ভালো বইপড়া হতো।সাথে বই নিয়েও গিয়েছিলাম।











আন্তর্জাতিক মানের এই রিসোর্টে আছে স্পা, ইনডোর গেইম জোন,জিমনেশিয়াম, হেলিপ্যাড ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ।এছাড়া এই রিসোর্টে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুবিধা সহ সুইমিং পুল রয়েছে,যার কথা না বলেই নয়।বেবি জোনও এই পুলে বেশ বড়।যাতে পারিবারিক আনন্দকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।কারন শিশুদের সাথে শুধু থাকা নয়,তাদের সঙ্গ দেয়া যায়।এমন কি বিকেলবেলা বা সন্ধ্যায় পুল সাইডে বসে কাছের মানুষের সাথে কফি খেতে খেতে গল্প করতেও বেশ লাগবে।

আমরা যখন গিয়েছি তখন পূর্ণিমা ছিল। রাতে রিসোর্টে ভিতরের রাস্তায় একা একা হাঁটতে গিয়ে আমার সঙ্গী হলো চাঁদ আর দোলনচাঁপার মনমাতানো গন্ধ।ও হ্যাঁ, ঝিঁঝিঁ পোকা গুলো কিন্তু সারাক্ষণই সঙ্গে থাকে।তবে এমন রাতে আমার একটুও হেডফোনে গান শুনতে ইচ্ছে করছিল না।কারন তাতে আমি ঝিঁঝিঁ পোকা আর বাতাসের গান শুনতে পাবো না।রেকর্ড করা গান তো সবসময়ই শুনি, প্রকৃতির গান তো সচরাচর শোনা যায় না।আর বনের পূর্ণিমা রাতে চাঁদ-মেঘের লুকোচুরি খেলা যে আলো-আঁধারির দৃশ্যের অবতারণা করে সেই সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্দী করে না রাখতে পারলে নিজ ফটো গ্যালারীর দীনতা হবে।তাই আমি ক্যামেরা সাথে নিতে ভুলি নাই।







কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা এই বিনোদনকেন্দ্রে অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ৪৫ জন আনসার।তাই তো এতরাতেও আমি একা নারী হয়েও বাহিরে হাঁটতে পারছি, জোৎস্নার আলোয় স্নান করতে পারছি।নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াও এখানে আপ্যায়নের দায়িত্বে আছে প্রায় 120 জন কর্মকর্তা কর্মচারী।





শালবন ঘেরা এই রিসোর্টে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা হলো জলাশয়ের ওপর নির্মিত চমৎকার কাঠের দোতলা রেস্টুরেন্টটি।যারনীচে কৃত্রিম লেক,যাতে একুরিয়াম ফিস ছেড়ে রাখা আছে।এখানে বাংলা,ভারতীয়,থাই,চাইনিজ খাবারের ব্যবস্থা আছে, বুফে এবং অর্ডার দুই ভাবেই খাওয়া যায়।রেস্টুরেন্টের দুই পাশের বেলকনিতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।যাতে বনের মাঝে খাওয়ার আমেজ পাওয়া যায়। কারন এই রিসোর্টটি সম্পূর্ণ বনের মধ্যে নির্মিত।পরিবেশগত দিক থেকে ভাবলে যা খারাপ লাগার মত,আমাদের মত কম বনভূমির দেশের সংরক্ষিত বনায়ন নষ্ট করে পর্যটনের ব্যাপ্তি ঘটনার বিপক্ষে আমি নীতিগত ভাবে।এসব সিরিয়াস কথা বাদ দিলে একজন টুরিস্ট হিসেবে আমি বলবো শহরের কোলাহল, ক্লান্তি বা রুটিনমাফিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে স্বল্প সময়ের জন্য সবুজে পরিবেষ্টিত নান্দনিক এই রিসোর্টটি হতে পারে আপনার কাছের অবকাশ কেন্দ্র।












একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post