up

#চেন্নাই শহরের এক বিকাল


দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই।যা আগে মাদ্রাজ নামে পরিচিত ছিল। দক্ষিণ ভারতের প্রবেশ পথ হিসেবে পরিচিত শহরটি।শহরটি সম্পর্কে আমি কমই জানি, তবে এখানে এসে মনে হলো ব্যস্ত হলেও রক্ষণশীল এবং সংস্কৃতির ধারক শহরটি। 





ভারতের চেন্নাই শহরে আমি বেড়াতে যাইনি,গিয়েছিলাম ব্যক্তিগত কাজে।তাই দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারনাই ছিল না।কিন্তু কাজের শেষে যখনি সময় পেয়েছি, তখনি বেরিয়ে পড়েছি শহরটা দেখতে।চেন্নাই যাওযার দ্বিতীয় দিন বিকালে আমার অভ্যাসগত ভাবে বেরিয়ে পড়েছি।হোটেলের ফ্রন্ট ডেক্সে জানতে চাইলাম কি কি দেখার আছে আশেপাশে।তারা জানালো মেরিনাবীচ, গোল্ডেন বীচ, কপালেশ্বর মন্দির, চার্চ, জাদুঘর সহ আরো কিছু জায়গার নাম।তবে সব জায়গাই যেতে হবে অটো বা ক্যাব নিয়ে ওয়াক দূরত্ব কিছু নেই।তবু বের হলাম এই ভেবে কিছু না হলেও বৈকালিক ভ্রমণ তো হবে।


আমরা ছিলাম রামাদা হোটেলে,এটি গান্ধী ইরভিন ব্রিজের কাছেই এগমোর এরিয়ায়।হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তা ক্রস করার জন্য দাঁড়ালে ট্রাফিক পুলিশকে পাশে দেখে গুড আফটারনুন বলতেই তিনি মুচকি হাসি দিতে উত্তর দেয়, এবং জানতে চায় কোথায় থেকে।বাংলাদেশ শুনে জানতে চাইলো কোথায় যাচ্ছি। বললাম এমনি হাঁটতে বেরিয়েছি শুনে, বলল সোজা রাস্তা ক্রস করে হাঁটলে 7/5 মিনিটের দূরত্বে একটা জৈন মন্দির পড়বে,দেখতে পারো।
















7/8 মিনিট পথ হাঁটার পর একটা মন্দির দেখলাম রাস্তায় সাথেই কিন্তু তামিল ভাষা বা মালয়ালম ভাষায় নাম লেখা, তাই বুঝতে পারিনি নাম।ভিতরে ঢোকার পর একজন আমাকে ইশারায় ডেকে বলল, মাথায় কাপড় না দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ।আমি কিছুটা বিব্রত হলাম, কাপড় কোথায় পাবো।ভদ্র লোক আমাকে একটা ঝুঁড়িতে ওড়না দেখিয়ে দিলো, পরে নেয়ার জন্য।আমি যথাযথ রীতি অনুসারে মাথায় ওড়না জড়িয়ে ভিতরে গেলাম। আমার আগে কখনো জৈন মন্দির দেখার সুযোগ হয়নি।আমাদের দেশে জৈন ধর্মাবলম্বী আছে বলে আমার জানা নেই।তবে ধর্মীয় কারনের চেয়ে মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী আমাকে বেশী অবাক করেছে।














অপূর্ব সুন্দর,সম্পূর্ণ আলাদা স্থাপত্য রীতিতে তৈরি।বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরের মতো গম্বুজ আছে বাহিরের আদলে।কিন্তু মন্দিরের ভিতরে অনেক পিলার।অনেকটা বড় মন্দিরের ভিতর যেন ছোট মন্দিরের মতো।আর পুরো মন্দির শ্বেত পাথরের।মন্দিরের দেয়াল, পিলার, সিলিং সর্বত্র কারুশিল্প।কোথাও হাতির সারি তো,কোথাও নৃত্যরত নারীরা, কোথাও বিভিন্ন দেব দেবী।শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় পুরো মন্দির হয়ে উঠেছে অনবদ্য এক কবিতা।এ যেন পাথরের কবিতা।

















মন্দির থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলাম ক্যামেরা সাথে না আনার দুঃখ নিয়ে।কারন মোবাইলে তোলা ছবি আর ডিএসএলআর এর ছবি আলাদা।এমন শ্বেত পাথরের কাব্য কথার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য চাই ভালো ক্যামেরা।আমি কল্পনাই করিনি এমন কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে, তাই হোটেল থেকে খালি হাতে বেরিয়েছি।যা সাধারণত করি না।


অল্প কিছু দূর যাওয়ার পর এক মন্দিরের সামনে পিকআপ গাড়ির খোলা অংশে ফুল দিয়ে কারুকাজ করা শঙ্খ ও পদ্ম আকৃতির আসন তৈরি করছে পূজার জন্য।মন্দিরের সামনে অনেক ভীড় পূজার অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে।আমি ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পাইনি।তাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আতশবাজি পোড়ানো এবং গাড়ীর আসন সাজানো দেখলাম।এটি একটি তামিল মুরুগানদেবতার মন্দির।ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের পূজা বেশী হয়।তামিল ও মালয়ালম ভাষায় কার্তিককে মুরুগান বা ময়ূরী স্কন্দস্বামী বলে।তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী মুরুগান তামিল দেশের রক্ষাকর্তা। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে কার্তিক যুদ্ধদেবতা।কার্তিক বৈদিক দেবতা নন; তিনি পৌরাণিক এবং প্রাচীন দেবতা। আমি আসলে ধর্মীয় বিষয়ে কম জানি, ভুল হলে ক্ষমা করবেন, ইচ্ছাকৃত নয়।





কিছুসময় পর মন্দির থেকে দেবতা এনে আসনে বসিয়ে ধর্মীয় র‍্যালি বের হল নারী পুরুষ মিলে।র‍্যালির প্রথমে থাকলো পিকআপ গাড়ীটি, তার পিছনে কিছু মানুষ হাতে ত্রিশুল,ধামা,সহ বিভিন্ন অস্ত্রের প্রতিকৃতি নিয়ে র‍্যালিতে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।আমার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্নধারার আয়োজন।আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছি দেখে মিছিলে অংশ নিতে আমাকে ডেকেছিল কেউ কেউ।আমি বিনয়ের সাথে ইশারায় না জানালাম।এখানে বড় সমস্যা হল ভাষা।চেন্নাই এর বেশীর ভাগ মানুষ হিন্দী জানে না। মালয়ালম বা তামিল আমি জানি না।তাই ইংরাজিই একমাত্র মাধ্যম, যা আবার স্থানীয় অনেকেই জানে না।তাই আমি এদের পূজা বা রীতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারি নাই, শুধু অবাক হয়ে দেখেছি মাত্র।


দক্ষিণ ভারত, সিংঙ্গাপুর,শ্রীলংকা,মালয়েশিয়া, মরিশাস সহ বিভিন্ন যেখানে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠী আছে সেখানেই মুরুগানের পূজা হয়।মালেয়শিয়ায় তো বিশাল কার্তিকের মূর্তিই আছে,যা পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র।


যখন হোটেলের উদ্দেশে ফেরার পথ ধরলাম তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে।হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম ট্রাফিক পুলিশটিকে বিশেষ ধন্যবাদ দিবো, এমন চমৎকার সময় উপহার দেয়ার জন্য।আমি হয়তো বা এলোমেলো কিছুসময় হেঁটে বা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে সময় কাটিয়ে রুমে ফিরতাম। উনিই আমার বৈকালিক ভ্রমণটাকে আনন্দময় ও অর্থময় করেছে।কিন্তু ধন্যবাদ দেয়ার জন্য পাই নাই তাকে।হয়তো বা ডিউটি শেষ।প্রতিদিন কত কত অতিথিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার কারনে উনি হয়তো ভুলেও গেছেন আমার কথা,আমি কিন্তু মনে রেখেছি তাকে স্পেশাল ট্রাফিকপুলিশ হিসেবে।








আগামীকালের ব্যস্ততা শেষে এমনি আরেক মনোমুগ্ধকর বিকাল কাটানোর পরিকল্পনার নিয়ে ভাবতে ভাবতে হোটেলে পৌঁছে গিয়েছিলাম।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post