up

#থাইল্যান্ড ভ্রমণ


বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য ভারতের পরে এখন থাইল্যান্ড। বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় থাইল্যান্ড হওয়ার কারন বিমান ভাড়া কম, ভিসা পাওয়ার ঝামেলা কম, খরচ কম, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা,শপিং এর শহর। বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য শুধু নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। ট্রেকারস থেকে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী, রয়্যালটি পর্যবেক্ষক, ফুড লাভার,শপিং পাগল বা মেডিটেশনের ভক্ত সবার কাছে থাইল্যান্ড ডিম ডেসটিনেশন।

থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধের সময় ছাড়া কখনও কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না।তাই তাদের সংস্কৃতিতে চাপিয়ে দেয়া কোন নেই, সম্পূর্ণ নিজস্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এর সংস্কৃতিতে ভারত, চীন, মায়ানমারের সংস্কৃতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে।থাই নাগরিকদের আতিথেয়তা এবং হাসি মুখে হাত জোড় করে অভিবাদনের রীতি দেখলে মনে হয় দেশটির "হাসির দেশ" ডাকনামটি যথার্থ।

টুরিস্ট ফেন্ডলি থাইল্যান্ডের সাথে আমার যোগাযোগ অনেক পুরানো।তবে এবার এক ভিন্ন থাইল্যান্ড দেখলাম। অবশ্য 
করোনাভাইরাসে আমাদের কতকিছুই তো বদলে দিয়েছে।বলতে গেলে দুবছর আগের আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথাই তো ভুলতে বসেছি।তারপরও জীবন থেমে থাকে না, সময়ের সাথে কতকিছু মানিয়ে নেয়।যেমন আমরা মাস্ক পরা,ট্র্যাভেল করতে করোনা টেষ্ট মেনে নিয়েছি।তেমনি সহজ সরল থাইল্যান্ড ভ্রমণকে করোনা  এবার জটিল করে তুলেছে।

২০২১ সালের শেষের দিকে আমরা ট্র্যাভেল পাস, ইনস্যুরেন্স,নিদিষ্ট হোটেলের অগ্রিম বুকিং,করোনা টেষ্টর রিপোর্ট, করোনার টিকা সনদ সহ সব ঝামেলা শেষ করে বিমানবন্দরের কর্মকর্তার ননসেন্স প্রশ্নের(সাথে কে আছে?একা নাকি?)উত্তর ইত্যাদি ঝামেলা শেষ করে রওনা হয়েছিলাম।তবে এবার আমি যাত্রা ভিন্ন কারনে হওয়ায় মুড নষ্ট হওয়ার বিষয় নাই।কিন্তু যদি বেড়ানোর জন্য যেতাম তাহলে এমন প্রশ্নে মেজাজ হারানো স্বাভাবিক ছিল।

থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে নেমেই অনেকটা সুনসান এয়ারপোর্ট দেখে চোখে ধাক্কা লাগলো।এত কম মানুষের ইমিগ্রেশন লাইন কখনো দেখিনি।ট্র্যাভেলার সিম কাউন্টার থেকে ট্রেক্সির বুথ কোন কিছু আগের মতো নেই।আমরা সাধারণত ট্যাক্সি বুথ থেকে সিরিয়াল নিয়ে নিজেরা হোটেলে চলে যাই।কখনো ব্যাংকক এজেন্সির সাথে যাই নাই, এই প্রথম।করোনাভাইরাসের কারনে এটাই নিয়ম। এখন ভিসা থেকে হোটেল বুকিং সব এজেন্সির মাধ্যমে করতে বাধ্য।বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিকতা শেষ করে হোটেলের সাটল বাসে ব্যাংককের দিকে রওনা দিলাম।

আমি থাইল্যান্ড গিয়েছি ১৮/২০ বার।এতবার আমি আর কোন দেশে যাই নাই।বারবার যেতে যেতে এই শহরকে বেশ আপন মনে হয়।অনেকটা পাশের বাড়ীর মতো।থাইল্যান্ড যে আমার কাছে পাশের বাড়ী,সেই আমার কাছে এই ব্যাংকক শহরকে অচেনা কোন শহর মনে হচ্ছে।তবে এই অচেনা শহর আমার চোখকে আনন্দে উৎসুক করার বদলে মন খারাপ করে দিচ্ছে।কারন এমন কর্মব্যস্ত, প্রাণচাঞ্চল্য ভরা শহরটার এই কি মৃতরূপ!
২০০৫ সালে আমি প্রথম থাইল্যান্ড যাই, তখন এমভাসিটর হোটেলে ছিলাম।হোটেলটি অনেক বড় জায়গা নিয়ে।সাধারণত ট্যুর অপারেটরদের সাথে যারা বেড়াতে আসে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান থেকে, তারা এই হোটেলে উঠে।সকালে এতো মানুষ একসাথে ব্রেকফাস্ট করে মনে হয় কোন পাবলিক পিকনিকে এসেছি।যা আমার কাছে চরম অস্বস্তিকর।এই পরিবেশ নষ্ট করার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ দায়ী না, দায়ী অতিথিরা।সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই হোটেল লবি জমজমাট, কেউ ইন হচ্ছে তো কেউ আউট হচ্ছে। সেই এমবাসিটর হোটেলের সামনে গাড়ী থামার পর কোন লাগেজবয় এলো না।গাড়ীর ড্রাইভার লকার খুলে দিল নিজেদের ব্যাগ বের করতে।নিজ নিজ ব্যাগ নিজেরা নিয়ে ভিতরদিকে যেতে একটা টেবিলের উপর রাখা অনেক কাগজ থেকে নিজের নাম বের করে তার সাথে রাখা রুম কার্ড নিতে নির্দেশ দিলো দুজন কর্মী। এটাই চেকইন সিষ্টেম।আমি সম্পূর্ণ অবাক তাদের নিয়ম দেখে।একটা হোটেলে চেকইন করছি, আমি না কোন সরাইখানায় এসেছি ?এমন অভ্যর্থনা জীবনে পাই নাই, এমনকি কল্পনাও করিনি এমন অভ্যর্থনাও হতে পারে।যাক অকল্পনীয় অভ্যর্থনার পর কয়েক পা আগানোর পর একজন দেখিয়ে দিল টেবিলের উপর রাখা খারাবের প্যাকেট থেকে একটা তুলে নিতে।সব নিয়ে করোনা টেষ্টের সেম্পল দিয়ে রুমে গেলাম।
সকালে ডোরবেল বাজিয়ে দরজায় ব্রেকফাস্টের ব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে গেল, যা দেখে মেজাজ খারাপ হলো।অন্তত একটা ট্রেতে রুম সার্ভিস তো দেয়া যেতো ! রুম মেকাপ করেনি প্রথম দুদিন।গেটে টাওয়াল রেখে গেছে ডোরবেল দিয়ে।তাদের সার্ভিস দেখে মনে হলো আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি এসে পড়েছি, তাই যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে।এমন থাইল্যান্ড আগে দেখি নাই।
পরদিন করোনা টেষ্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পর হোটেল থেকে বের হতে পেরেছি।আমাদের কাজ ছিল ব্রমুনগাড হাসপাতালে ডাঃ দেখানোর।সেখানে কর্মী আগের অর্ধেক, রোগী চার ভাগের এক ভাগ। কবে সেবা আগের মতো।হোটেলের মতো আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত নই।
এখানে হাসপাতালের কথা বলতে হয়

যারা বাজেট ট্রাভেলার তাদের জন্য থাইল্যান্ডের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আর তাই সাধারণত ভ্রমণের স্বর্গরাজ্য দেখতে প্রতিবছরই অসংখ্য লোক আসে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে।থাইল্যান্ড দেশটি যেমন  সুন্দর তেমনি অসাধারণ সুন্দর এর সংস্কৃতিও।যারা থাইল্যান্ডের যান নি এখনও তাদেরকে বলে বুঝানো যাবে না যে দেশটি আসলে ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য কতটা জনপ্রিয়। এই দেশটির অসাধারণ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেয় সবাইকে।


কিভাবে যাবেন 
 বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় থাই এয়ারওয়েজ।তবে  ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কম বাজেটের টুরিস্টদের কাছে কম রেন্টের জন্য জনপ্রিয়। এছাড়া এয়ার ইন্ডিয়া, মালিন্দো এয়ার, এয়ার এশিয়া,বিমান বাংলাদেশ ইত্যাদি এয়ারওয়েজ আছে, যার যার সময়,সুযোগ মতো পছন্দ করতে পারে।

কোথায় থাকবেন
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক এমন এক জায়গা যেখানে বাজেট ট্রাভেলার থেকে শুরু করে লাক্সারি টুরিস্ট সবার জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা আছে।সবচেয়ে বড় কথা থাইল্যান্ডে হোটেলের রেন্টের উপর ফ্যাসিলিটি নির্ভর করে, কিন্তু নিরাপত্তা নয়। হোটেলের রেন্ট যাই হোক সব হোটেলই নিরাপদ বা টুরিস্ট ফেন্ডলি।তবে বাংলাদেশী টুরিস্টদের জন্য সুকুসভিতের 'স ১১ বা ৩ এর হোটেল বা মোটেল গুলো সুবিধেজনক। কারন খাবার, শপিং, বার, পার্লার সব হাতের নাগালে পাওয়া যায়।

খাবার 

নুডল স্যুপ,ম্যাংগো রাইস,মশলাদার চিংড়ি স্যুপ, নারকেল স্যুপে চিকেন, সবুজ পেঁপে সালাদ, প্যাড থাই বা ভাজা নুডলস, খাও প্যাড বা ভাজা রাইস, পানাং কারি, কাই জিউ বা থাই অমলেট ইত্যাদি থাই ফুড বেশ জনপ্রিয় বিদেশীদের কাছে।এছাড়া যারা ফুডের বিষয়ে কিছুটা স্পর্শকাতর তাদের জন্য রয়েছে বাংলাদেশী, ভারত, পাকিস্তানি ফুড।আর থাই স্ট্রিট ফুড তো সারাবিশ্বের টুরিস্টদের কাছে জনপ্রিয়।বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট গুলো বেশী আছে 'স ১১ বা সুকুমভিতের ১১ নাম্বার সড়কে আর ৩ নাম্বার সড়কে।


দর্শনীয় স্থান 

গ্র্যান্ড প্যালেস, ওয়াট অরুন, ওয়াট ফ্রা কাইরো, ভাসমান বাজার বা ফ্লোটিন মার্কেট,রোজ গার্ডেন, ওয়াট ফো, লুম্ফিনি পার্ক, ব্যাংকক সাফারি ওয়ার্ল্ড, ব্যাংকক ড্রিম ওয়ার্ল্ড , ওসান ওয়ার্ল্ড, মাদাম তুসো মিউজিয়াম, ব্যাংকক জাতীয় জাদুঘর, এলিফেন্ট সো,সিয়াম সো,ডিনার সাফারি ইত্যাদি।

মার্কেটিং
বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয় মার্কেট রবিনসন,এমবিকে,ট্যার্মিনাল ২১,ফ্লাটিনাম, সেন্ট্রাল ইত্যাদি মার্কেট।

খরচ 
থাইল্যান্ডের খরচ মূলত নির্ভর করে নিজের উপর।কোন টুরিস্ট চাইলে ৫০,০০০ টাকায়ও ঘুরে আসতে পারে।যেমন: বিমান ভাড়া- ২৫০০০, খাবার- ৫০০/৬০০ টাকা, রুম ভাড়া- ৫০০০টাকা(সম্ভাব্য খরচ দিন প্রতি)


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post