up

দুবাই ভ্রমণ(খুঁটিনাটি)

 

Dubai

কল্পনার দুবাই মানে ধু ধু মরুভূমি, বালির উঁচু-নিচু বালিয়াড়ি বা বালির সাগর,সেই বালির সাগরে বাতাসের কারণে তৈরী হওয়া নানান আকারের লাল বালির ঢেউ,দলবদ্ধ উটের সারি, উঁচু-নিচু পাহাড়াকৃতির বালির রাজ্য দিগন্ত জোড়া।কিন্তু বাস্তবে পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই দুবাইয়ে শুধু মরুভূমিতে সীমাবদ্ধ নেই,দুবাই এখন এই অঞ্চলের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল এবং বিশ্বের বিশতম ব্যয়বহুল শহর,পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রও।টুরিস্ট আর সম্ভাবনাময় ব্যবসাকেন্দ্র হওয়ায় দুবাই এখন বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলনমেলার কেন্দ্র হয়ে গেছে।অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি দুবাই শহরে মাত্র ১৭% লোক হল প্রকৃত দুবাইয়ের নাগরিক। আর বাদবাকি সব বহিরাগত।এখানে প্রায় দুশ’রও বেশি জাতির মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে।তাই আপনি যে দেশ থেকেই দুবাই বেড়াতে যান না কেন, স্বদেশী মানুষের দেখা পাবেনই।

#দুবাই শহরের প্রধান আকর্ষণ:

বুর্জ খলিফা, বুর্জ আল আরব, মিরাকল গার্ডেন, দুবাই ফ্রেম, দুবাই মল, পাম আইল্যান্ড, স্কাইডাইভিং, স্কি দুবাই, দুবাই অ্যাকুরিয়াম, দ্য মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার, আল কুদরা লেক, আল বারশা পন্ড পার্ক, মুভি থিয়েটার, সমুদ্র বিচ,দুবাই মেরিনা, দুবাই স্বর্ণ মার্কেট, মরুভূমিতে সাফারি, কোরআন পার্ক, প্রমিজ ব্রিজসহ অনেকগুলো আকর্ষণীয় জায়গা ও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য বিখ্যাত এ শহরটি।

#ভ্রমণ টিপস 

1. দুবাইয়ের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি।তাই আবহাওয়া গত দিক বিবেচনা করলে ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেরুয়ারি।কিন্তু খরচের বিষয়ে বিবেচনা করলে এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।তখন বিমানের ভাড়া থেকে হোটেল ভাড়া,টুরিস্ট এক্টিভিটি সবকিছুতেই ডিসকাউন্ট থাকে।

2. দুবাইয়ে ট্যাক্সি বা ক্যাব ভাড়া বেশি,আবার রাস্তায় জ্যামও ভালোই।তাই মেট্রোতে চলাচল করা ভালো।

3. কম খরচে মুখরোচক খাবার খেতে হলে স্টীট ফুট সেরা অপশন।

4.সান জ্যাকেট বা ছাতা অবশ্যই সাথে নেয়া উচিৎ।

5.হালকা ও সুতির পোশাক নেয়া আরামদায়ক হবে। 

6. টুপি এবং সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না।

7.মেট্রো স্টেশন বা বাস স্টেশনের কাছাকাছি হোটেল নিলে যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয় হবে।

#যা করা থেকে বিরত থাকবেন:

১.স্থানীয়দের ছবি তুলতে হলে আগে অনুমতি নিন।

২.দুবাইয়ের আইন ইসলামিক মূল্যবোধের সাথে গভীরভাবে জড়িত।তাই এমন কোনো কাজে লিপ্ত হবেন না যা ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে অবমাননা করে।যেমন-রোজার মাসে দুবাইতে থাকাকালীন জনসমক্ষে খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকুন। 

৩. দুবাইয়ের আইন অনুযায়ী ধূমপান এবং প্রকাশ্যে মদ পান করা একটি গুরুতর অপরাধ।তাই এড়িয়ে চলার উচিত।

#কেনাকাটা 

দুবাইকে কেনাকাটার স্বর্গ আমি বলবো না।কারন দুবাইয়ের মলগুলোর বেশির ভাগ জিনিসই উচ্চ বিত্তদের জন্য সাজানো। দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় মল হলো দুবাই মল,যা বুর্জ খলিফার সাথে সংযুক্ত। দুবাই মল বিশ্বের বৃহত্তম মলগুলির মধ্যে একটি।এই মল এতোটাই আকর্ষণীয় এবং এত বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় যে অনেকে এখানে বেড়াতে আসে।দুবাইয়ে ৭০টির মতো মল আছে।পৃথিবীর দামী ব্যান্ড গুলোর সবারই সো রুম আছে দুবাইয়ে।এখানে কেনাকাটা অনেকটা বিনোদনের মতো।তবে দুবাইয়ে এসে কোন টুরিস্ট বিশেষ করে বাংলাদেশি টুরিস্ট স্বর্ণ কিনে নাই পাওয়া যাবে না।কারন এখানে স্বর্ণ দামী কিছুটা কম, মানে পৃথিবীর সেরা।

#যোগাযোগ ব্যবস্থা 

গরম এবং বালির কারণে দুবাই হাঁটার যোগ্য শহর নয়।তবে দুবাইয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক চমৎকার ও পরিকল্পিত।দুবাইয়ে মেট্রো, পাবলিক বাস, এমনকি ফেরি এবং ক্যাব সহ সবধরনের যানবাহনের ব্যবস্থা আছে।এসব ব্যবহারের সুবিধার্থে NOL কার্ড সিস্টেম করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য গাড়ী তো আছেই। কেউ যদি নিজে গাড়ি চালাতে চান তাহলেও গাড়ি ভাড়া করা যায়।অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

#দুবাইয়ের জনপ্রিয় খাবার 

আমি ফুডি নই,তবে যারা ফুডি তাদের কাছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা আর আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার সাথে সুস্বাদু  খাবারের জন্য দুবাই ভ্রমণ সত্যি অর্থবহ হয়ে উঠবে।কারন বিভিন্ন ধরণের খাবারের জন্য বিখ্যাত এই দুবাই।এখানের বিখ্যাত আবর মেনুর খাবারের ঘ্রান এবং স্বাদ একবার খেলে মুখে লেগে থাকার মতো।

স্টাফড ক্যামেল:খাবারগুলোর মধ্যে স্টাফড ক্যামেল অন্যতম।দুবাই এর মরুর বুকে একমাত্র খাবার হিসাবে একসময় এটি ব্যবহৃত হতো যা স্বাদে ও গুনে এককথায় অনন্য।এটিকে দুবাই এর সেরা অভিজাত খাবার হিসাবেও ধরা হয়,যা আকারে অনেক বড় এবং ডেকারেশনও দেখা মতো। ঐতিহ্যবাহী প্লেটে করে পরিবেশন করা হয় বলে অনেকেই অবাক হয়ে যায়।

মাহালাবিয়া:দুবাই এর আরেকটি সুস্বাদু মেনু হচ্ছে মেহলাবিয়া।এটি একটি ডেজার্ট।যা রোজ ওয়াটার দিয়ে বানানো হয়। স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে যা সারা দুনিয়ায় পরিচিত।

ঘুজি: ঘুজিকে বলা যায় একধরণের আরবদের জাতীয় খাবার।ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরী এই খাবার দুবাইয়ের সর্বত্র পাওয়া যায়।

শর্মা:শর্মা নামের এই খাবারটার সাথে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত।অনেকটা পরোটার মতো রোল করা থাকে আর ভিতরে মাংস, সালাদ, এবং, সস সবকিছু মিক্স করা থাকে।

বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই বর্তমানে ভ্রমণপ্রিয় এবং ব্যবসায়ীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post