up

#ভিয়েতনাম ভ্রমণ( ভিয়েতনাম ভ্রমণের খুটিনাটি)


 

ভিয়েতনাম একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, আশ্চর্যজনক খাবার এবং অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ সহ একটি সুন্দর দেশ।উত্তরে চীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগরে ঘেরা একটি দেশ ভিয়েতনাম।দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশ একটা সময় সাম্রাজ্যবাদী হিংস্রতার কবলে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল বারেবারে।তবে বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণ এক দেশ।বহুল সংস্কৃতির দেশ ভিয়েতনামে প্রায় ৫০টির মত জাতি বসবাস করে। তাদের সবচেয়ে প্রাচীন তিনটি ধর্ম হল মহায়ন বৌদ্ধধর্ম কনফুসিয়াসবাদ এবং দাওবাদ।সবচেয়ে বড় কথা ভিয়েতনামের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলি সদা হাস্যময়।আর আতিথেয়তায় অন্যন্য।অতিথি তথা বিদেশি পর্যটকদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাতে এঁরা সদা প্রস্তুত।



ভিয়েতনাম ভ্রমনে আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে কিছু ভ্রমণ টিপস রয়েছে:

1. ভিয়েতনাম ভ্রমণে আগেই পরিকল্পনা করুন: ভিয়েতনাম অনেকটা লম্বা আকৃতির একটি দেশ, তাই আগে থেকেই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফোকাস করতে বা উত্তর থেকে দক্ষিণে বা তদ্বিপরীত ভ্রমণ করতে পারেন। আর ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে প্রচুর ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে যা ভিয়েতনামের  সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক এবং আকর্ষণগুলি সহজে বেড়াতে পারবেন।

2. হ্যানয় দেখুন: হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী এবং যার অর্থ নদীর মধ্যে শহর। এখান থেকে ভ্রমণ শুরু করা আমার মতে বেশ।একদিনের সিটি ট্যুর নিয়ে ওল্ড কোয়ার্টার, হোয়ান কিম লেক এবং হো চি মিন সমাধি সহ পুরো শহরটা একটা চক্কর দিয়ে দিলে ভিয়েতনামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যাবে।গিফটের জন্য এবং ঘর সাজানো জন্য স্থানীয় ক্ষুদ্রশিল্প বা কুটিরশিল্পের জিনিসপত্র অতুলনীয়।আর স্টীট ফুডের স্বাদ না নিলে তো ভ্রমণই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

3. Halong Bay-এ ক্রুজ: এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর দেশ ভিয়েতনাম। Halong Bay হল ভিয়েতনামের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি, এবং বিশাল চুনাপাথরের ক্লিফ এবং পান্না জলের উপর ভাসমান ক্রুজে বসে মনে হবে কোন স্বর্গীয় নগরীতে প্রবেশ করেছি।ক্রুজের আতিথেয়তা,খাবার ,পরিবেশ সব কিছুই আপনার স্বপ্নময় সময় থেকে আরো অতুলনীয় করে তুলবে।আর বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা কেউ লিখতে পারবে না,আমি তো নৈস্য।কারন এমন সৌন্দর্য শুধু চোখ দেখে উপভোগ করতে হয়।আর একটা ভালো দিক হলো এখানে বাজেট থেকে বিলাসিতা পর্যন্ত প্রচুর ক্রুজ বিকল্প রয়েছে।

4. প্রাচীন শহর হুই: ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিয়েতনামের পুরোনো শহর হুই। প্রায় গোটা শহরজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে এনগুয়েন সাম্রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন।এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সিটাডেলের বাড়ি। এছাড়া নুগুয়েন সম্রাটদের সমাধি পরিদর্শন করতে পারেন এবং পারফিউম নদীর ধারে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন।

5. রান্নার ক্লাস করতে পারেন: ভিয়েতনামের খাবারকে পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের মেন্যুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি এবং সামুদ্রিক মাছ।সেইসঙ্গে ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী রন্ধন কৌশল তো রয়েছেই। রান্নার সময় ভিয়েতনামিজরা ভাজা পোড়া একেবারেই এড়িয়ে যায় এবং তেলের ব্যবহার যতটা কম করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখে। সেজন্যই ভিয়েতনামের খাবার পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে স্বীকৃত।আর এই পৃথিবী খ্যাত ভিয়েতনামী রন্ধনপ্রণালী  ও তাদের তাজা ভেষজ, সাহসী স্বাদ এবং চালের নুডলস রান্না শিখতে অনেকে আগ্রহী, বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা।আপনিও ফো, বান মি এবং স্প্রিং রোলের মতো খাবারগুলি কীভাবে তৈরি করতে হয় তা শিখতে পারেন আনন্দের জন্য😊।

6.মি সান:মি সান হলো ভিয়েতনামের একটি প্রাচীন শহর।।বর্তমানে এই শহরে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন রূপকথার ঘুমন্ত অরণ্য নগরীতে ঢুকে পড়েছেন। পর্বত এবং জঙ্গলে ঘেরা ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর মি সানের আরেক নাম মন্দিরের শহর। শহরের নির্মাণ হয়েছিল চতুর্থ শতকে চাম যুগে।এই হিন্দু প্রধান শহরটি সপ্তম থেকে দশম শতক পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত নগরীই ছিল।তারপর থেকেই ক্রমশ লোকজন এই শহর পরিত্যাগ করতে থাকে।ত্রয়োদশ শতক থেকে এটি পুরোপুরিই পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হয়ে যায়। শহরটিতে এখনও প্রায় কুড়িটির মতো মন্দিরের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলোই স্থাপত্যই তৈরি করা হয়েছিল ইট এবং বালির ব্লক দিয়ে। মন্দিরের স্থাপত্যশিল্পে এশিয়ার সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট। বিশেষ করে ভারত এবং মালয় সাম্রাজ্যের ছাপই স্পষ্ট। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকানরা এরকম বহু প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটিই যেন এক আস্ত জ্বলজ্যান্ত ইতিহাস।

7. হো চি মিন সিটির দক্ষিণ দিকে যান: হো চি মিন সিটি, সাইগন নামেও পরিচিত, ভিয়েতনামের বৃহত্তম শহর এবং একটি ব্যস্ত মহানগর।কু চি টানেল, ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি যাদুঘর এবং নটরডেম ক্যাথেড্রাল দেখার মতো জায়গা।

8. সৈকতে বিশ্রাম নিন: ভিয়েতনামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর কিছু সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এনহা ট্রাং, ফু কুওক এবং দা নাং। সাদা বালি এবং স্বচ্ছ জলে সাঁতার কেটে দুই এক দিন কাটানোর আনন্দ নেয়া মতো।


9. স্টীট ফুডের স্বাদ নিতে ভুলবেন না: ভিয়েতনাম স্টীট ফুডের জন্য বিখ্যাত।ভিয়েতনামের সব শহরেই এই সুস্বাদু খাবাগুলোর স্বাদ নিতে পারেন।ভিয়েতনামের স্টীট ফুডের বিশেষত্ব হলো ফুড ডেকারেশন।তাই স্থানীয় ফুডের স্বাদ না নিলে ভ্রমণের একটা অংশ বাদ পড়ে যাবে।স্টীট ফুডের নাম- banh mi, pho, এবং bun cha৷.

10. সাপাতে ট্রেকিং করতে যান: সাপা ভিয়েতনামের উত্তর-পশ্চিমে একটি পাহাড়ী অঞ্চল এবং অনেক জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বাসস্থান।এখানে ধানক্ষেত গুলোকে সিঁড়ির মতো করে তৈরি করা হয়েছে,যার ভিতর দিয়ে সাইকেল চালানোর মতো চমৎকার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।সবুজ এই পথের মধ্য দিয়ে ট্রেকিং করতে পারেন।এছাড়া আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা সম্পর্কে জানতে স্থানীয় গ্রামগুলিতে যেতে পারেন।


প্রাণ প্রাচুর্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী এক দেশ ভিয়েতনাম।তাই উৎসুক মানুষদের জন্য বিষ্ময়ের উপাদানও এখানে কম নেই।আর আমি আশা করি এই ভ্রমণ টিপস আপনাকে আপনার ভিয়েতনাম ভ্রমণে সাহায্য করবে। ভ্রমন উপভোগ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post