up

#লন্ডন ভ্রমণ(লন্ডন ভ্রমণের টিপস)


লন্ডন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী একটি নগরী ছিল ঊনিশ শতকে। যখন এই শহরটি সমৃদ্ধশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল।প্রায় ২০০০ বছর বয়সী এই শহর এখনো বিশ্বের জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় শহর। পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম এই লন্ডনে প্রাচীন অভিজাত স্থাপনা আর আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের পাশাপাশি অবস্থান।এই শহরে সবকিছুতেই বৈচিত্র্য আছে,এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি–গোষ্ঠীর মানুষের বাস করে পাশাপাশি।তাই তো অনেকে লন্ডনকে মাইনোরিটি মেজোরিটির শহরও বলে।কারণ এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মাইনোরিটি অর্থাৎ সংখ্যালঘু যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে।জাতিগত বৈচিত্র্যের মতো খাবারও বৈচিত্র্যময়।

ইউরোপের বৃহত্তম এই মহানগরটিতে রয়েছে ৮৮ লক্ষ মানুষের বসবাস। যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশেরও বেশি বলে মনে করা হয়।লন্ডন শহরটি শুধু নিজ দেশের মানুষের কাছে প্রিয় টুরিস্টদের পছন্দের জায়গা।কারণ চার চারটি বিশ্ব ঐতিহ্যের পাশাপাশি এখানে  অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা আছে।

আভিজাত্য আর আধুনিকতার মিলনস্থল লন্ডনে আছে আভিজাত্য, আছে জ্ঞান, দর্শন, বিজ্ঞান।লন্ডনের সংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মতো মানুষের শিষ্টাচার বোধও টুরিস্টদের বিস্মিত করে। পরিকল্পিত এই শহরের জীবনযাত্রাও টুরিস্ট বান্ধব।


প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের সংমিশ্রণের চমৎকার একটা শহর লন্ডন।এমন দেশে ভ্রমণও এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার বিষয়।লন্ডনে বেড়ানোর আকর্ষণীয় অনেক জায়গা আছে।সব তো একবারে দেখা সম্ভব নয়,যে জায়গা গুলো না দেখলে লন্ডন ভিজিট অর্থহীন তেমনি কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থানের নাম দেওয়া হলঃ 

বাকিংহাম প্যালেস
লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত রাজপ্রাসাদগুলোর অন্যতম এটি। প্রসাদটির  ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং আভিজাত্য এটিকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা।প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ফটোসেশানের জন্য ভীড় জমানো এই প্রাসাদটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং অবসরকালীন বিনোদনের জন্য তৈরি হয়েছিল।প্রথমে প্রাসাদটির নাম ছিল বাকিংহাম হাউস।প্রাসাদটি ১৮৩৭ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহণের সময় ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। নানারকমের শ্বেতপাথরের মূর্তি এবং মানুষ ও সিংহের ভাস্কর্য সহ নজরকাড়া সব ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো বিরাট একটি বাগান আছে প্রাসাদের সামনে।এমন আকর্ষণীয় বাগান বা প্রাসাদ কিন্তু কাছ থেকে দেখার সুযোগ নেই। ভেতরে বড় কালো টুপি আর লাল পোশাক পরা প্রহরীদের সশস্ত্র পাহারা থাকে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের প্রতিহত করতে।তবে রাজ পরিবারের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের ফাঁকে প্রাসাদটি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।তখন রানীদের ব্যাক্তিগত কোয়ার্টারে যাওয়া না গেলেও যেখানে রানী এবং রাজ পরিবারের সদস্যরা দেশের অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, বিভিন্ন উৎসব এবং অফিসিয়াল কাজে যোগ দেন সেখানে যাওয়া যায়।দর্শনার্থীদের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া।

অবস্থান:পাতাল ট্রেন থেকে ভিক্টোরিয়া মেট্রো স্টেশনে নেমে সোজা রাস্তা।পায়ে হাঁটা পথ।

হাইড পার্ক 
হাইড পার্ক হলো লন্ডনের বিখ্যাত এক রয়েল পার্ক। বিশাল এলাকা জুড়ে সারি সারি মোটাসোটা গাছপালা,প্রশস্ত হাঁটার পথ,দর্শনার্থীদের জন্য বসার বেঞ্চ দিয়ে সাজানো পার্কটি।পার্কটিতে বিশাল একটা লেক আছে, যেখানে নিশ্চিত মনে ফ্লেমিগো সাঁতার কাটে।এই পার্কের কবুতর গুলো সাথে দর্শনার্থীদের সম্পর্কও ভালো।তারা নিশ্চিত মনে আশপাশে ঘুরে বেড়ায়।

অবস্থান: বাকিংহাম প্যালেস থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে।

লন্ডন আই 
লন্ডনের পর্যটন আইকন হিসাবে দেখা হয় লন্ডন আইকে।
২০০০ সালে নির্মিত লন্ডন আইয়ের স্পেশালালিটি হলো এর সর্বোচ্চ পয়েন্ট থেকে ৩৬০ ডিগ্রি প্যানারোমিক ভিউতে  লন্ডন শহরের পুরো চিত্র দেখা যায়। লন্ডন আই বা এই গোলাকৃতি রাইডটির বিশেষত্ব হলো, এতে ৩২টি বক্স আছে।যা দিয়ে বৃহত্তর লন্ডনের ৩২টি উপশহরের প্রতিনিধিত্ব করা বুঝায়।প্রতিটি বক্সের ওজন ১০ টনের মতো এবং প্রতিটিতে ২৫ জন বসতে পারে।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাইডটিতে দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ আছে।
টেমস নদীর পাশে হওয়ায় লন্ডন আইয়ের সৌন্দর্য এবং পরিবেশ অতুলনীয়।এর সৌন্দর্য দিনের এবং রাতের আলাদা,দুটোর আবেদনই আলাদা।দিনের বেলা লন্ডন আই থেকে প্রতিদিন লন্ডন শহরকে প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক পাখির দৃষ্টিতে দেখে।লন্ডন আই উপভোগ করতে হলে টিকেট নিতে হয়।কাউন্টার খোলে সকাল ৯.৩০টা থেকে। তবে রাইড ওপেন হয় ১০টা হয়।রাতের লন্ডন আই ও এর চারপাশের এলাকায় বাতিগুলো জ্বলে উঠলে সেই রঙবেরঙের আলোর  আভা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।বৈদ্যুতিক বাতির আলোয়  টেমস নদীকে দেয় অন্যন্য রূপ,যা পুরো লন্ডনের রাজকীয় গাম্ভীর্যের পরিচয় দেয়।

পর্যটনের দিক থেকে আকর্ষণীয় হবার কারণে লন্ডন আই প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার জেতে। এর মধ্যে আছে বিবিসি লন্ডন পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট মিলিনিয়াম এট্রাকশন অ্যাওয়ার্ড, কুইন্স এ্যাওয়ার্ড ফর এন্টারপ্রাইজ, দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ড, দ্য ব্রিটিশ ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি।

অবস্থান: লন্ডন আই পার্লামেন্ট ভবন থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে।


পার্লামেন্ট ভবন
একসময় বলা হতো ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত হয় না।এতটা বিশাল তাদের রাজত্ব ছিল।সেই পৃথিবী শাসন করা  সাম্রাজ্যের বর্তমান পার্লামেন্ট ভবনটি তেমনি আভিজাত্য পূর্ণ। হাঁটাপথের দূরত্ব।নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর উঁচু ভবনটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়।দর্শনার্থীরা সীমিত অংশে প্রবেশ করতে পারে অনুমতি নিয়ে।তবে অধিবেশন চলাকালে কঠোর নিরাপত্তা থাকে।পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে বেশ কিছু ভাস্কর্য রয়েছে।

অবস্থান: লন্ডন আই থেকে পার্লামেন্ট ভবন হাঁটাপথের দূরত্বে।

বিগ বেন 
বিগ বেন এর আদি নাম ছিল ক্লক টাওয়ার। ১৮৫৯ সালে নির্মিত হয় ৩১৫ ফুট উঁচু এই টাওয়ারের বিগ বেন। বিগ বেন লন্ডনের আইকনিক স্থাপনা।কেউ কেউ মনে করে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি  শব্দ করা এই ঘড়িটির গ্রেট বেল নামটি নেওয়া হয়েছে স্যার বেঞ্জামিন হলের নাম থেকে। কেননা, তিনি গ্রেট বেলের নির্মাণকাজ তদারক করেছিলেন। তবে কেউ কেউ ইংরেজ মুষ্টিযোদ্ধা ও হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন বেঞ্জামিন কন্টের নাম থেকে বিগ বেন এসেছে বলেও মনে করে।বিগ বেনের ওজন প্রায় পাঁচ টন এবং ঘড়িটির মিনিটের কাঁটাটি ১ ফুট বা ৩০৫ মিলিমিটার লম্বা। প্রায় ১৬ তলা উচ্চতার এই বিগ বেন টাওয়ার পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি সেলফি স্পটের মধ্যে অন্যতম।যে কেউ লন্ডন ভ্রমণ এসে তার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে অবশ্যই সেলফি তোলার জন্য প্রথম পছন্দের জায়গা বিগ বেন।

অবস্থান: বিগ বেন আর পার্লামেন্ট ভবন কাছাকাছি এবং লন্ডন আই থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে।

টাওয়ার ব্রিজ
টাওয়ার ব্রিজ লন্ডনের আইকন হিসাবে খ্যাত।লন্ডনের নামের সাথে যে ছবি মনে আসে তা হলো টাওয়ার ব্রিজ।এই ঝুলন্ত সেতুটি ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ সালে নির্মান করা হয়ছিল। এটি মূলত কংক্রিট এবং লোহায় তৈরি একটি বক্স গার্ডার সেতু।তবে টেমস নদীর উপর আগে এখানে কাঠের তৈরি সেতু ছিল, যেটি লন্ডনের প্রথম রোমান প্রতিষ্ঠাতারা তৈরি করেছিলেন।পৃথিবীতে অসংখ্য নান্দনিক, ব্যতিক্রমী ও বিচিত্র ব্রিজ থাকলেও বর্তমানে লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজের মতো জনপ্রিয় কোনোটি নয়।যা যুগের পর যুগ,বছরের পর বছর ধরে সমগ্র বিশ্বে আলাদা একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে।প্রতিদিন সারাবিশ্বের অসংখ্য মানুষ এই ব্রিজ দেখতে আসে।ব্রিজটি দিনের একটি সময় খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। নান্দনিক এ ব্রিজটির বড় বিশেষত্ব হলো এর বিশাল আকৃতির দুটি টাওয়ার।দৃষ্টিনন্দন এই ব্রিজটির দিনের ও রাতের সৌন্দর্য আলাদা।টেমসের নদীর ওপরের  ঐতিহাসিক এই ব্রিজ যেন রাজকীয় লন্ডনের আভিজাত্যের আরেক প্রতীক।

অবস্থান:টাওয়ার ব্রিজ ' টাওয়ার অব লন্ডনের' কাছে টেমস নদীর উপর।


সময় ও সুযোগ থাকলে প্রিন্সেস ডায়ানার বিখ্যাত ওয়েলস ম্যামোরিয়াল এবং ডায়না মেমোরিয়াল ঝর্ণা। লন্ডনের কেনসিংটন গার্ডেন পথে আরো দেখতে পারবেন আলবার্ট ম্যামোরিয়াল, ইতালিয়ান গার্ডেন, ডায়না মেমোরিয়াল প্লে গ্রাউন্ড এই জায়গাগুলো দেখতে পারেন।

কোথায় থাকবেন
লন্ডন খুবই ব্যয়বহুল একটা শহর।এখানে পাঁচ তারকা হোটেল বা রিসোর্ট অনেক।আবার মধ্য মানের হোটেলও পাওয়া যায় সর্বত্র।তবে এই ব্যয়বহুল শহরে কেউ যদি কম বাজেটে বেড়াতে চায় তাকে থাকতে হবে শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণ আশে পাশের এলাকায়।এখানে তুলনামূলক কম খরচে চমৎকার খাবার, বার এবং অনেক কফি শপ পাওয়া যাবে।

টিপস 
১.লন্ডনে বেড়ানো জন্য ওয়েস্টার কার্ড কিনে তাতে টাকা ভরে নেয়া ভালো হবে,নয় তো বাসের–ট্রেনের টিকেট কিনতে অসুবিধে হবে।
২. সিটি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা সুবিধাজনক হবে।ম্যাপে গন্তব্যের স্থান দিলেই দেখাবে কতটুকু রাস্তা হাঁটতে হবে, কত দূর ট্রেনে যেতে হবে বা কতটুকু জায়গা বাসে যেতে হবে। এমনকি কতক্ষণ পর পর বাস বা ট্রেন আছে তা–ও জানা যাবে গুগল ম্যাপে। 

৩. লন্ডনে সাইকেলে করে যাতায়াত সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী। কারণ এতে কাঙ্ক্ষিত ট্রেন স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ট্যাক্সি কিংবা গাড়ি না নিয়ে সাইকেল নিয়ে বেড়ানো যায় খুবই কম টাকায়।বিশেষ করে বাজেট ট্র্যাভেলারদের জন্য সাইকেল বেটার।

৪.লন্ডনের আবহাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই রোদ, এই বৃষ্টি! তাই ছাতা রাখা বুদ্ধিমানের 

৫. ট্রাভেল এডাপ্টার সাথে নেয়া উচিৎ হবে।নাহলে হোটেলে সমস্যা হতে পারে ডিভাইস চার্জ দেয়া নিয়ে।

৬.টেপের জল এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই প্রয়োজনে নিঃসন্দেহে খাওয়া যায়, বোতল কেনা বেকার।

৭.সাধারনত লন্ডনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সারা শহরে  ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা আছে। তাই স্থানীয় সিম কার্ড না  কিনেও চলা যায়।মোবাইলে সর্বত্র ওয়াইফাই কানেক্ট করা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post