up

#ঢাকার আশেপাশের রিসোর্ট


 কর্মময় এই যান্ত্রিক জীবনের রুটিন বদ্ধ জীবন যাপন মাঝেমাঝে বড্ড একঘেয়েমি লাগে,পালাতে ইচ্ছে করে ইট-পাথরের এই শহরটাকে পিছনে ফেলে।কিন্তু ছুটি পাওয়া বড়ই কঠিন।পেলেও লম্বা ছুটি তো বড় কোন উৎসব ছাড়া মিলে না।তাই ২/৩ ছোট্ট ছুটিকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই একটু নিরিবিলি শান্ত এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে আনন্দময় সময় কাটিয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে নিতে।কিন্তু  এরজন্য গন্তব্য নির্বাচন করাও কম জটিল নয়।তবে অবকাশযাপনের জন্য পাহাড় না সমুদ্র ভালো তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু ২/৩ দিনের ছুটি কাটানোর  জন্য ঢাকা নগরবাসীকে কোন জায়গা পছন্দ করতে বললে কোন বিতর্ক ছাড়া ঢাকার আশপাশের কোন রিসোর্টকে উত্তম বলবে।কারন বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ হলেও ট্রাফিকজ্যাম এই দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। তাই আজকাল আমার মতো অনেকেরই ২/৩ দিনের বন্ধে দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।কারন এতে রাস্তায় অনেকটা সময় কেটে যায়, তাও আবার বিরক্তিকর জ্যামে।

সেদিক থেকে সবুজবেষ্টিত শাল-গজারির বনের ঘেরা গাজীপুরের রিসোর্টগুলোই সবচেয়ে ভালো।গাছের পাতার ফাঁকেফাঁকে সূর্যের আলোর লুকোচুরি খেলা অদ্ভুত আবেশ তৈরি করে বনের ভেতরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পিচের রাস্তা ধরে যেতে যেতে হেমন্তের কালজয়ী গান এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো...' ২০/২৫ মিনিটে যদিও শেষ হয়ে গেছে স্বপ্নময় পথ,তবে এই ২০/২৫ মিনিটই ইট পাথরের জঙ্গাল ঢাকা শহর থেকে পালানোকে সার্থক করতে যথেষ্ট।


খরচ:

ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পাতে ৫ জোনে মোট তিন ধরনের কটেজ রুম।যেমন-
ওয়ান বেডরুম ভিলা : ২ জন ব্যক্তি( ভাড়া প্রায় ১২,০০০ টাকা)
ওয়ান বেডরুম স্যুইট : ২ জন ব্যক্তি(ভাড়া প্রায়  ১৬,০০০ টাকা)
টু বেডরুম স্যুইট : ৪ জন ব্যক্তি (ভাড়া প্রায় ২৪,০০০ টাকা)
ভাড়া কম বেশি হয় বিশেষ সময়ে।

 সুবিধা:

শিশু জোন সহ বিশালাকার সুইমিংপুল,শিশুদের জন্য আউটডোর এবং ইনডোর গেমের ব্যবস্থা,বড়দের জন্য লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, বিলিয়ার্ড খেলার ব্যবস্থা আছে।সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই ইন্টারনেটর সুব্যবস্থা রয়েছে।এছাড়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা এবং গাড়ী পার্কিং এর সুব্যবস্থা রয়েছে।


বাসে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকা- ময়মনসিংহ হাইওয়ে হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তায় যেতে হবে।রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে তিন  কিলোমিটার দূরে ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা।ট্রাফিক জ্যাম না থাকলে ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা থেকে ২.৩০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।



খরচ
প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলা:
প্রেসিডেন্সিয়াল কিং ভিলার তিন রুমের ভাড়া ৬০,০০০++ টাকা( ৬ জন)।
প্রিমিয়াম ভিলা:
প্রিমিয়াম ভিলার রুম ভাড়া ১২৫০০+ টাকা(২জন)।এই ক্যাটাগরির সর্বমোট ২২ টি রুম রয়েছে। 
রাজা ভিউ টাওয়ার:
রাজা ভিউ টাওয়ারে স্যুপেরিয়র কিং ও স্যুপেরিয়র টুইন রুমের ভাড়া ১০,৫০০+টাকা(২জন)
ওয়াটার লজ:
 ওয়াটার লজের স্যুপেরিয়র কিং ও স্যুপেরিয়র টুইন রুমের ভাড়া ১০,৫০০++ টাকা(২জন)। 
মাড হাউস:
মাড হাউজ হলো রিসোর্টের সম্পূর্ণ নতুন সংযোজন।আধুনিক সুযোগসুবিধায়সহ মাটির ঘর বা আধুনিক সুবিধাযুক্ত গ্রামীণ ঘর।মাড হাউসের ডিলাক্স কিং ও ডিলাক্স টুইন রুমের ভাড়া ৮,০০০++ টাকা(২ জন)।
প্রতিটি রুমে হাই স্পিড ইন্টারনেট, কফি তৈরীর ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট টিভি এবং কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টের সুবিধা পাবে অতিথিরা।আর রুম ভাড়ার সাথে ১৫% ভ্যাট এবং ১০% সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য।

যেভাবে যাবেন সারাহ রিসোর্ট :
ঢাকার মহাখালীর বিমানবন্দর বাসস্টপ থেকে ময়মনসিংহ রোড ধরে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা হয়ে রাজেন্দ্রপুরের বাসে রাজবারি বাসস্টপে নামতে হবে। সেখান থেকে ৩ কিলোমিটার রাস্তা যেয়ে আবার বা দিকে মোড় নিয়ে কিছু রাস্তা গেলে পাওয়া যাবে সারাহ রিসোর্ট।তবে ব্যক্তিগত গাড়ীতে গেলে বেশী সুবিধে।২ ঘণ্টায় যাওয়া যায় সাধারণত।

ডে লং প্যাকেজ :
সারাহ রিসোর্টে ডে লং প্যাকেজ বা ডে ট্যুরের ব্যবস্থা আছে।জনপ্রতি ৩০০০ টাকার ডে প্যাকেজে রয়েছে। এতে লাঞ্চ, সুইমিং পুল, জিম, বোট রাইডিং এবং ওয়াইফাই সেবা পায় অতিথিরা।ডে লং প্যাকেজে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রিসোর্টে অবস্থান করতে পারেন।

সুবিধা 
বিশাল দুটি লেকে আছে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণের সুবিধা।কায়াকিং অতিথিদের জন্য ফ্রি।তবে সাম্পান ঘুরতে পেমেন্ট করতে হবে।আমার কাছে টাকার অংকটা বেশি মনে হয়েছে। এছাড়া সুইমিংপুল,জাকুজ্জি ও জিমের পাশাপাশি আছে ইনডোর-আউটডোর খেলাধুলার ব্যবস্থা। শিশুদের খেলার জায়গা ও বিভিন্ন রাইড।সাইকেল ভাড়া দেয়া হয় বাচ্চাদের উপযোগী।


খরচ:
তিন বেড রুমের ভিলা:৬ জনের জন্য(বড়) ১৭০০০ টাকা 
ছয় বেড রুমের ভিলা: ১৩ জনের জন্য(বড়) ২১০০০ টাকা
ড্রাইভারের থাকা ফ্রি।খারাব দিন প্রতি ২০০০ টাকা।তবে বিশেষ সময়ে এই খরচ কম বেশী হতে পারে।

ভিলার  সংখ্যা: 
রিসোর্ট কর্মীর ভাষ্যমতে তাদের ১০টা ভিলা অতিথিদের সেবার জন্য তৈরি।কয়েকটা রেডির পথে।ভিলার সংখ্যা কম বলে কোন হলি ডে তে যেতে চাইলে আগেই বুকিং দেয়া উচিৎ হবে।


খাবার:
ভিন্ন ভিন্ন মেনুর ভিন্ন ভিন্ন দামের খাবারের প্যাকেজ আছে।অনেকটা সেট মেনু টাইপের।যেটা পছন্দ নিতে পারেন। পরিবারের পছন্দ অনুসারের পছন্দ করার সুযোগ আছে। দামও বেশী নয়।

কিভাবে যাবেন: 
বাসে গাজীপুরের শ্রীপুর নেমে অটো নিয়ে তালিপাবাদ কালমেঘা বাজার হয়ে যাওয়া যায় কালমেঘ রিসোর্টে।সবচেয়ে সুবিধেজনক হলো ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে যাওয়া।তাতে পুরো রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।সবাই তাই গাড়ী নিয়েই রিসোর্টে যায়।

রিসোর্টের আন্তর্জাতিক অর্জন:
 মর্যাদাপূর্ণ এশিয়া প্যাসিফিক প্রপার্টি অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ী।


খরচ:

জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে অতিথিদের সুবিধার্থে।কেউ কেউ ডে ট্যুর করতে পছন্দ করে, কেউ আবার নাইট স্টে করতে।তাই  প্যাকেজগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। সাধারণত ১৫০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকার মধ্যে প্যাকেজগুলো করা হয়েছে।
জনপ্রতি ৩০০০ টাকা( নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার)
শিশু ৬০০টাকা(নাস্তা,দুপুর ও রাতের খাবার)
কাজের লোক ও ড্রাইভারের জন্য ৬০০টাকা।
সারাদিনের জন্য যারা যেতে চায় তাদের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকার প্যাকেজ(সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকালের স্ন্যাক্স)

কারো কারো কাছে খরচটা একটু বেশী মনে হয়। তবে আমার কাছে সেবার এবং খাবারের মানের সাথে তুলনা করলে বেশী মনে হয় না।


কিভাবে যাবেন:

 বাস অথবা অন্য কোনো যানবাহনে করে পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে সেখান থেকে রিকশা বা অটো করে যাওয়া যায় জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে।সবচেয়ে সুবিধেজনক হলো ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া।পুবাইল কলেজ গেট এলাকা থেকে এই রিসোর্টটির দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার।

#নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট

খরচ:

হোটেল কমপ্লেক্স, ওয়াটার বাংলো, ফ্যামিলি বাংলো 
হোটেল কমপ্লেক্সে আছে তিন ধরনের রুম।যেমন-
কাপল রেগুলার:২জন(ভাড়া ৬৩২৫ টাকা)
 টুইন রেগুলার:২জন (দুইটি আলাদা বেড, ভাড়া ৬৯৫৭ টাকা)
ডিলাক্স কাপল:২ জন (ভাড়া ৮২২২ টাকা)

ওয়াটার বাংলোতে তিন ধরণের কটেজ আছে
ডিলাক্স কটেজ: ২জন (ভাড়া ১০৭৫০ টাকা)
 প্রিমিয়াম সুইট: ৪ জন(দুইটি বেড রুম ও একটি লিভিং রুম,ভাড়া  ২২৭৭০ টাকা)
ফ্যামিলি সুইট: ৪ জন(দুইটি বেড রুম,ভাড়া ২০২৪০ টাকা)

ফ্যামিলি বাংলো:এক পরিবারের ৫/৬ জন( দুইটি বেড রুম, একটি চিলড্রেন রুম, দুইটি বাথরুম, একটি ড্রইং রুম, একটি ডাইনিং রুম, একটি বারান্দা আছে। ভাড়া ২৭৮৩০ টাকা)

সুবিধা:

বোট রাইডিং,টেবিল টেনিস, সুইমিংপুল,লাইব্রেরী, লেকে মাছ ধরার সুব্যবস্থা,ফুটবল-ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য আছে সেখানে আলাদা খেলার জোন।এছাড়া ক্যাম্প,বন-ফায়ার,কনসার্ট ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়।বিভিন্ন কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স রুমের ব্যবস্থা আছে।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাসে গাজীপুর চৌরাস্তা নেমে অটো নিয়ে রাজবাড়ি বাজার হয়ে দেড় কিলোমিটার এগুলেই যাওয়া যাবে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট এন্ড কনফারেন্স সেন্টার।তবে সবচেয়ে সহজ ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে বা গাড়ী রিজার্ভ করে যাওয়া।যা অধিকাংশ গেষ্ট করে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post